ঢাকাবুধবার, ১১ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সিলেট এম,এ, জি,ওসমানী মেডিকেল অসহায় রোগীর উপরে ডাক্তারের ‘লাথিকাণ্ড’

মুক্তিযোদ্ধা প্রতিদিন
এপ্রিল ৩০, ২০২৫ ১:৪৪ অপরাহ্ণ
শেয়ার:
Link Copied!

সিলেট এম,এ, জি,ওসমানী মেডিকেল অসহায় রোগীর উপরে ডাক্তারের ‘লাথিকাণ্ড’

কামাল খান
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর স্বজনকে শারীরিকভাবে ডাক্তার এক লাঞ্ছনার ঘটনাকে জন্ম দিয়েছেন। যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়, ভিডিওতে এমন কোনো কথা রোগী বা রোগীর স্বজনকে বলতে শুনা যায়নি। এছাড়া এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভুক্তভোগী রোগীর বাবা।একটি চক্রের এমন অসৎ প্রচেষ্টায় নিন্দার ঝড় উঠেছে সিলেটে। সিলেটের সচেতন মহল প্রশ্ন তুলেছেন- ওই রোগী বা তার স্বজনরা কি জানতেন যে লাথি মারা ডাক্তার সিলেটের বাইরের বা ভিন্ন ধর্মালম্বী? সম্ভবত ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে অভিযুক্ত চিকিৎসককে শাস্তির হাত থেকে রক্ষা করাই হয়তো এ অসাধু চক্রের উদ্দেশ্য।
সচেতন সিলেটবাসী অভিযুক্ত ডাক্তার ও অসাধু চক্রকে চিহ্নিত করে তাদের সবাইকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ওসমানী হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা জুবায়ের আহমদ নামক এক রোগী রবিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে পেটের ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন। এ সময় তাঁর পাশ দিয়ে যাওয়া হাসপাতালটির সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তন্ময় দেবনাথকে হাতের ইশারায় ডাক দেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন ডা. তন্ময়।
তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেন- ‘তুমি কি জমিদার এসেছো যে আমাকে হাতের ইশারায় ডাকছো? আমি কি ফকিন্নির পুত?’এসময় স্বজনরা ডাক্তার দেবনাথকে রোগীর শারীরিক অবস্থা বুঝাতে চেষ্টা করেন এবং তাকে রাগান্বিত না হওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু ডাক্তার দেবনাথ শান্ত হওয়ার পরিবর্তে আরো উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং এক পর্যায়ে রোগীর মামাতো ভাইকে লক্ষ্য করে লাথি মারেন।
এ দৃশ্যটি ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকজন মুঠোফোনে ভিডিও করে পরে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করেন। মুহুর্তেই ভিডিওটি নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়ে এবং সমালোচনার ঝড় উঠে। সবাই অভিযুক্ত ডাক্তারের শাস্তি দাবি করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী রোগী জুবায়ের আহমদ ও তার স্বজনরা সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার খলাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। পেটের বাঁ পাশে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসার জন্য কয়েক দিন আগে সিলেট আসেন জুবায়ের। প্রাথমিকভাবে এক চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের অপারেশন করান তিনি। কিন্তু ব্যথা না কমায় সেখান থেকে তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। গত ২৫ এপ্রিল (শুক্রবার) তিনি ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি হন। রবিবার দুপুরে পেটে তীব্র ব্যথা শুরু হলে ডাক্তারকে ডাকতে গিয়েই চিকিৎসকের এমন অমানবিক আচরণের শিকার হন জুবায়ের ও তার স্বজনরা।
রোগীর পিতা আব্দুল কাদির বলেন- আমার ছেলেটি ব্যথায় ছটফট করছিল, আমি ঔষধ আনতে বাইরে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে জানতে পারি- আমার অসুস্থ ছেলে ও এক ভাগনাকে ডাক্তার নাকি লাথি মারছেন। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
এদিকে, ঘটনার পর সংবাদমাধ্যমে ভিন্ন বক্তব্য দেন অভিযুক্ত চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘ওই দিন পাশের ওয়ার্ডে একজন রোগী মারা যান। তাই আমি দ্রুত সেখানে যাচ্ছিলাম। তখন রোগীর বিছানায় শুয়ে পায়ের উপর পা তুলে আমাকে ‘এই স্যার, এই স্যার’ বলে ডাক দিচ্ছিলেন রোগীর এক স্বজন। পরে আমি পাশের ওয়ার্ড থেকে এসে তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে, সে কেন এভাবে আমাকে ডাকলে। আমার কথা শুনে তিনি আমাকে স্থানীয় ক্ষমতার কথা বলেন এবং আমাকে মালাউনের বাচ্চা, নন সিলেটি, আবাদি বলেন। এতে আমি মেজাজ হারিয়ে ফেলি।’
তবে অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলেছেন রোগীর পিতা আব্দুল কাদির। বলেন- ওই ডাক্তার শাস্তি থেকে বাঁচতে এমন মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। আমরা তো জানি-ই না তিনি কোন ধর্মের কিংবা তার বাড়ি কোথায়!
অপরদিকে, তোলপাড় করা এ ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঘটনার তদন্তে ৬ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলমকে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি অভিযুক্ত চিকিৎসককে তার দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ওসমানী হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে বলেন- ঘটনাটি অনভিপ্রেত। এ বিষয়ে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।