- মাধবপুরে ডাক্তার না হয়েও সকাল বিকাল রোগী দেখেন হাসান মনির
নিজস্ব প্রতিবেদক :
এমবিবিএস কিংবা বিডিএস সনদ নেই, রোগী দেখার সরকারী কোন অনুমোদনও নেই তবুও নামের আগে লিখেন ডাক্তার, চেম্বারে রোগী দেখেন সকাল বিকাল। কুমিল্লা ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলার মাধবপুরে এমন একজন ভূয়া চিকিৎসকের সন্ধান মিলেছে। ওই ভূয়া চিকিৎসকের নাম মো: কামরুল হাসান মনির। তিনি ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলার মাধবপুর গ্রামের বাসিন্দা আ: সালাম ভূঁইয়ার পুত্র।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডাক্তারী পেশা একটি সেবামূলক কাজ হলেও ডিগ্রীধারী ডাক্তার না হয়েও এই পেশাকে অধিক মুনাফা আয়ের ব্যবসায় পরিনত করেছেন এই হাসান মনির। চেম্বারে রোগী ভিজিট করেন, প্রেসক্রিপশন লিখেন আবার তিনি নাকি সার্জারীও করেন।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের মাধবপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গত প্রায় পনেরো বছর পূর্বে “ভূঁইয়া ড্রাগ হাউজ” নামে একটি ফার্মেসী প্রতিষ্ঠা করেন মো: কামরুল হাসান মনির। ঔষদ বিক্রয়ের পাশাপাশি রোগী দেখার জন্য আলাদা ব্যবস্থা রেখেছেন সেখানে। এমবিবিএস কিংবা বিডিএস ডাক্তারী সনদ না থাকলেও ডাক্তার হিসাবে এলাকায় ডা. হাসান মনির নামে ব্যাপক নাম-ডাক রয়েছে তার।
ভূঁইয়া ড্রাগ হাউজ ফার্মেসীতে গিয়ে দেখা যায় ফার্মেসীর ভিতরে আলাদা কক্ষে সুসজ্জিত ভাবে রোগী দেখার চেম্বার রয়েছে। সেখানে অসংখ্য রোগী বসে আছে এবং তিনি রোগী ভিজিট করছেন। নিজ নামের প্যাডে রোগীর প্রেসক্রিপশন লিখছেন নিজের ইচ্ছামতো। লিখা শেষ হলে প্রেসক্রিপশন নিয়ে রোগীরা ভিড় করছে ওই ফার্মেসীতে।
টেবিল থেকে একটি ভিজিটিং কার্ড হাতে নিয়ে দেখা যায় রোগী দেখার ব্যাপারে অভিজ্ঞতার অভাব নেই তার। ভিজিটিং কার্ডে লেখা আছে ডা: এম.কে. হাসান (মনির), ডি.এম.এস (ঢাকা), মা ও শিশু এবং সার্জারীতে অভিজ্ঞ স্পেশাল ট্রেনিং শিশু স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশন (ঢাকা), জেনারেল প্র্যাক্টিশনার, চেম্বারঃ-ভূইয়া ড্রাগ হাউজ। এমন ভূয়া অভিজ্ঞতার প্রচার প্রচারনা চালিয়ে গ্রাম্য সহজ সরল অসহায় রোগীদের সাথে বছরের পর বছর ধরে প্রতারনা করে আসছেন হাসান মনির। যেনো দেখার কেউ নাই!
তার লেখা কয়েক জন রোগীর প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে দেখা যায়, রোগীর প্রেসক্রিপশনে এন্টিবায়োটিক সহ প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় নামে-বেনামে বিভিন্ন কোম্পানীর ঔষদ লিখেছেন। ওই ঔষধ তার ফার্মেসী থেকেই নিচ্ছে রোগীরা। চলছে রমরমা ব্যবসা। তবে তার সাথে কথা বলে এর কোন সঠিক উত্তর পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েক জনের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই হাসান মনির একজন ফার্মাসিস্ট অথচ দীর্ঘদিন যাবৎ নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে আসছেন। চেম্বারে রোগী ভিজিট করেন। নিজের অর্থিক ফায়দা হাসিলের জন্য প্রেসক্রিপশনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঔষধ ও নানা রকম শারীরিক পরিক্ষা লিখেন। প্রেসক্রিপশনে লিখা ঔষধ রোগীরা তার নিজের ফার্মেসী থেকে কিনতে হয় এবং শারীরিক পরিক্ষা গুলো করতে হয় তার নির্ধারিত হাসপাতালে। তার পাঠানো শারীরিক পরিক্ষা গুলোর বিনিময়ে হাসপাতাল থেকে নিয়মিত কমিশন নিয়ে থাকেন এমন ধারনা সচেতন মহলের। বিগত সৈরাচার সরকারের সময়ে নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে চিকিৎসার নামে দাপটের সহিত ব্যাপক অনিয়ম করেছেন যা এখনো অব্যাহত আছে।
তার খুঁটির জোর কোথায়, কাকে ম্যানেজ করে, কোন ক্ষমতাবলে একজন ফার্মাসিস্ট এলাকায় একজন দাপটশালী ডাক্তারে পরিনত হয়েছে এবং দিনের পর দিন গ্রামের সহজ সরল রোগীদের সাথে চিকিৎসার নামে প্রতারনা করে নিজের পকেট ভারী এমন প্রশ্ন স্থানীয় সচেতন জনতার। যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষ প্রতিকার চান তারা।
এবিষয়ে ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নিকট জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে জান।