চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত দেওয়ানগঞ্জ হাসপাতালে ২৩ চিকিৎসকের পদ শূন্য।
মোঃ সাগর আলী (জামালপুর জেলা) প্রতিনিধি
জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৯ চিকিৎসকের কাজের বোঝা চেপেছে ৬ জন চিকিৎসকের ওপর। এতে চরম বিপাকে সেবা নিতে আসা রোগীরা। তাদের অনেককে হাসপাতালে এসে প্রয়োজনীয় বিভাগের চিকিৎসক না পেয়ে ফেরত যেতে হচ্ছে। সঠিক চিকিৎসার জন্য তাদেরকে দৌঁড়াতে হচ্ছে জামালপুর কিংবা ময়মনসিংহের না হয় ঢাকার হাসপাতালগুলোতে। এতে তাদের অর্থ-সময় ব্যয়সহ পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি।
হাসপাতাল সৃত্রে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। ২০১০ সালে ৫০ শয্যা হিসেবে এ হাসপাতালে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার, মেডিক্যাল অফিসার, এসিস্ট্যান্ট সার্জন, জুনিয়র কনসালটেন্ট মিলে ২৯ জন চিকিৎসক থাকার কথা। তার মধ্যে বর্তমানে হাসপাতালটিতে কর্মরত ডাক্তার রয়েছেন ৬ জন। পদ থাকলেও ২৩ জন চিকিৎসকের পদ দীর্ঘদিন থেকে শূন্য রয়েছে। ফলে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
জানা যায়, ১০ জন জুনিয়র কনসালটেন্টের পদ থাকলেও হাসপাতালে শুধুমাত্র অ্যানেসথেসিয়া ও অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ রয়েছে। গাইনি, মেডিসিন, চক্ষু, হৃদরোগ, নাক-কান-গলা, চর্ম ও যৌন, সার্জারি, ফিজিওলজি বিভাগে কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই। অন্যদিকে দুইজন মেডিক্যাল অফিসার পদায়ন থাকলেও দু’টি পদই দীর্ঘদিন থেকে শূন্য রয়েছে। আবাসিক মেডিকেল অফিসার নেই।
এসিস্ট্যান্ট সার্জন ১৩ জন পদায়ন রয়েছে কিন্তু তার মধ্যে এ হাসপাতালে কর্মরত রয়েছে মাত্র ৪ জন, আটটি এসিস্ট্যান্ট সার্জনের পদও দীর্ঘদিন থেকে শূন্য রয়েছে। হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, এ হাসপাতালে প্রতিদিন গাইনি বিভাগে প্রচুর রোগী আসে। গাইনি বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় বিপুলসংখ্যক রোগীদের চিকিৎসার জন্য জেলার অন্যান্য হাসপাতাল থেকে গাইনি ডাক্তার ধার করে আনা হচ্ছে মাঝে-মধ্যে। তাতে করেও রোগীদের চাহিদা মিটছে না।
ডাংধরা ইউনিয়ন কাউনিয়ারচর বাসিন্দা আবু সাইদ জানান, আমার বাড়ি থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩০ কিলোমিটার দূরে। হাসপাতালে দেখি নাক-কান গলা ও চর্ম যৌন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই, চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে ।
পৌর এলাকার বাসিন্দা ভুট্টু খান বলেন, চিকিৎসক সংকটে ধুঁকছে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এ কারণে প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ব্যতিত এ উপজেলায় ভালো কোনো সরকারি বা প্রাইভেট হাসপাতাল নেই। জেলা সদর হাসপাতাল এ উপজেলা থেকে অনেক দূরে। এ অবস্থায় ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলাবাসী। ডাক্তার সংকটের কারণে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আহসান হাবীব জানান, দেওয়ানগঞ্জ হাসপাতালটিতে প্রতিদিন রোগীদের চাপ থাকে। কিন্তু ডাক্তার সংকটের কারণে ২৯ জন ডাক্তারের কাজ (অ্যানেসথেসিয়া ও অর্থোপেডিক কনসালটেন্টসহ) ৬ জন ডাক্তারকে করতে হচ্ছে। এতে ডাক্তারদের ওপর যেমন বেড়েছে চাপ, অন্যদিকে রোগীদের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। পদ থাকলে এ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ও বিষয়ভিত্তিক ডাক্তার নেই। হাসপাতালটিতে চিকিৎসার সামগ্রী, এম্বুলেন্স, রোগ শনাক্তকরণ যন্ত্র রয়েছে। পদ অনুযায়ী চিকিৎসক থাকলে এখানকার চিকিৎসা সেবার মান আরও উন্নত হতো রোগীরা ভালো সেবা পেত।